একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না। অন্তত নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলেও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়। নির্বাচনের তারিখ জানা না থাকলে বিনিয়োগ করবেন না অনেক উদ্যোক্তা। বরং অনিশ্চয়তায় রাতারাতি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ করছে। তবে চাইলেও নানা ক্ষেত্রে তারা সংস্কার করতে পারবেন না।
বস্ত্র ও পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি এক্সিবিশন (ডিটিজি) উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিটিএমএর সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কর্মসংস্থান না থাকলে চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা আদায়কে ব্যবসা হিসেবে নেয় কিছু লোক। হরতালও এ কারণেই ডাকা হয়। কর্মসংস্থান থাকলে হরতাল করার লোক থাকে না।
বিনিয়োগে স্থবিরতার অন্যান্য কারণের মধ্যে ডলার সংকটের কথাও তুলে ধরেন বিটিএমএ সভাপতি। শওকত আজিজ রাসেল আরও বলেন, ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পান না তারা। এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বিদেশিরা যাতে এ দেশে কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করেন, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। এতে ডলারের জোগান যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারবেন স্থানীয়রা। দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত এ প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বস্ত্র খাতে বর্তমানে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে– এ প্রশ্নে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ কিংবা আংশিক উৎপাদন বন্ধ থাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যাংকিং সমস্যা ও চোরাচালান ইত্যাদি নানা সমস্যা রয়েছে। শওকত আজিজ রাসেল বলেন, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা সুতা-কাপড়ে বাজার সয়লাব। স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ২ টন পণ্য আনার জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়, অথচ আসে ১০ টন। এগুলো খোলাবাজারে চলে যায়। এ কারণে দেশীয় বস্ত্র খাত সংকটে রয়েছে। চোরাচালান বন্ধে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করে একক পথ হিসেবে শুধু সমুদ্রপথে আমদানির সুযোগ রাখার জন্য বিটিএমএর পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। গত ছয় মাসেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চোরাচালানে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর শুধু বৈধ পথেই ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সুতা ও বস্ত্র ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। চোরাচালানের মাধ্যমে এসেছে হিসাব ছাড়া।
শিল্পে গ্যাসের সংকট প্রসঙ্গে বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, সরকার যখন যে দর চেয়েছে, সে দরেই গ্যাস কিনেছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তার পরও গ্যাস পাওয়া যায়নি। এখন আবার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম এত বেশি পরিবর্তন করা হলে বিনিয়োগ আশা করা যায় না। শিল্পে বিনিয়োগ চাইলে অন্তত ১০ বছরের জন্য গ্যাসের দর নির্ধারিত হারে বহাল রাখার দাবি করেন তিনি।