বাংলাদেশের বাণিজ্যের রাস্তা এবার বন্ধ করে দিল ভারত। ভারতীয় ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে এতদিন নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের মতো দেশে পণ্য রফতানি করত বাংলাদেশ। বিজ্ঞপ্তি জারি করে এবার সেই রাস্তা বন্ধ করে দিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও ভারতের মাটি ব্যবহার করেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল ঢাকা। কিন্তু সম্প্রতি চিনের সঙ্গে সখ্য় স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত। (India-Bangladesh Relations)
মঙ্গলবার Central Board of Indirect Taxes and Customs (CBIC) বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য জোর ধাক্কা খেতে চলেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সুপারিশেই নরেন্দ্র মোদির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর। বলা হয়েছে, মূলত জামা-কাপড় ব্যবসায়ীদের তরফে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। (Trans-shipment facility for Bangladesh)
ভারতের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশের সঙ্গে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে বাংলাদেশ, তার জন্য ২০২০ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বাংলাদেশকে প্রদত্ত সেই সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০২০ সালের ২৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হল। এখন থেকেই নির্দেশ কার্যকর হবে’। অর্থাৎ অন্য দেশে পণ্য রফতানি করতে আর শুল্কবিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ভারতের বন্দর, বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। সীমান্ত পেরিয়ে কন্টেনার, বন্ধ ট্রাক আর প্রবেশ করতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায়। তাঁর কথায়, “নিজেদের পণ্য রফতানি করতে আর জায়গার অভাব পড়বে না আমাদের। আগে বাংলাদেশকে জায়গা দিতে গিয়ে আমাদের জায়গায় কুলতো না।” জামা-কাপড়, জুতো, রত্ন এবং গয়নার ব্যবসায় ভারত এবং বাংলাদেশ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তা সত্ত্বেও এতদিন বাংলাদেশকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো। এখন তা বন্ধ হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তবে যে সময় বাংলাদেশকে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হল, তা নিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসছে। গত ২৬-২৯ দিন চিন সফরে ছিলেন ইউনূস। সেখানে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন, তা নিয়ে বিতর্ক বাধে। ইউনূস জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। তাদের কাছে সমুদ্রে যাওয়ার রাস্তা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেই নিরিখে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে। তাই চিনের কাছে অর্থনৈতিক প্রসার ঘটানোর রাস্তা রয়েছে। চিন বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদন থেকে বিক্রি, বাংলাদেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি এবং অন্যত্র রফতানিও করতে পারে।
ইউনূসের সেই মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু গয়। ভারতের বিরুদ্ধে তাহলে কি চিনা আগ্রাসনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন তিনি? ওঠে প্রশ্ন। আর সেই আবহেই ভারতের মাটির উপর দিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিল কেন্দ্র। তবে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে যে সব পণ্য ভারতে ঢুকে পড়েছে, তাদের আটকান হবে না। আগের নিয়ম অনুযায়ী তা বের করে নিয়ে যাওয়া যাবে।