বাংলাদেশের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বড় বদল আনল মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন প্রশাসন। সে দেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিবিটি) ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের বিষয়টি জানিয়েছে। তাদের দাবি, এর মধ্যে দিয়ে দেশের ইতিহাসকে নতুন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে পড়ুয়াদের কাছে। মুছে ফেলা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাও হ্রাস করা হয়েছে নতুন পাঠ্যক্রমে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকাও কমানো হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে!
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান অটুট থাকলেও, দু’টি অন্যতম বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। মুজিবুরের সঙ্গে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দু’টি ঐতিহাসিক ছবি মুছে ফেলা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক থেকে। দু’টি ছবিই ১৯৭২ সালের। সেই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার এক সমাবেশে যৌথ ভাষণ দিয়েছিলেন ইন্দিরা এবং মুজিবুর। সেই ছবি থাকছে না নতুন পাঠ্যপুস্তকে। এ ছাড়াও, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায় ইন্দিরাকে মুজিবুরের স্বাগত জানানোর ছবিও বাদ পড়েছে।
বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে হাসিনার নাম মুছে ফেলা। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বে পাঠ্যপুস্তকের পিছনের পাতায় পড়ুয়াদের প্রতি হাসিনার বার্তা মুদ্রিত ছিল। নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলিতে তা আর থাকছে না। তার পরিবর্তে জায়গা পেয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সময়কার দেওয়ালচিত্র।
নতুন পাঠ্যক্রমে মুজিবুরের কথা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা কয়েক জায়গায় হ্রাস করা হয়েছে। অথবা পুনর্লিখন করেছে ইউনূস প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার অধ্যায়গুলিকে নতুন করে লেখা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যান্য নেতানেত্রীর কথা সংযোজন করেছে এনসিবিটি।
জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। তার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন প্রশাসন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বেশ কিছু পরিবর্তনের পথে হাঁটে। স্কুলের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রক ৫৭ জন বিশেষজ্ঞের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকে বহু ক্ষেত্রে বদল করা হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মোট ৪৪১টি পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন করেছে এনসিবিটি। বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম রিয়াজুল হাসান ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে জানান, ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ২০২২-২৩ সালের পাঠ্যপুস্তক। ইন্দিরা সঙ্গে মুজিবুরের ছবি বাতিলের কথাও স্বীকার করেছেন রিয়াজুল। তিনি জানান, যে হেতু ২০২৩-২৪ সালের পাঠ্যপুস্তক পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে, তাই ওই ছবিগুলিকেও আর রাখা হয়নি।