দুর্গাপূজার প্রস্তুতির প্রায় শেষ দিকে কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকার গোপীনাথ জিউর আখড়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপের প্রতিমা ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনার পর জরুরি বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে বক্তব্য দেন হিন্দু নেতৃবৃন্দ। পরে সেখানে গিয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতে জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া প্রাঙ্গণে স্থাপিত গোপীনাথ সংঘের দুর্গা পূজামণ্ডপের সবগুলো প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। আখড়ার সবগুলো গেট বন্ধ ছিল। পাঁচ জন পাহারাদার রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে ছিলেন। পরে তারা ঘুমিয়ে যান। এ সুযোগে ভোর রাতে দুর্বৃত্তরা দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে প্রতিমাগুলো ভেঙে ফেলে।
খবর পেয়ে সকালে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গোপীনাথ জিউর আখড়ার দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিটন সরকার বলেন, ‘এ আখড়ায় প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলাম আমরা। এ ভাঙচুরে আমাদের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমন ঘটনা শহরে আর কোনোদিন হয়নি। যারা প্রতিমা ভাঙচুর করে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।’
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, ‘পূজার আগে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যথিত হয়েছে। সবাই এখন আতঙ্কে রয়েছে। এভাবে যদি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করবো।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের ধরতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। আশা করি দুর্গাপূজা নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিকে, এ ঘটনার পর দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে কালেক্টরেট সভাকক্ষে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় প্রতিমা ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
এবার কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলায় ৩৬৩টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ঘটনার পর জেলার সবগুলো পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।